ছবি সংগৃহীত
কবরের জীবন বলতে আলমে বরজখকে বোঝায়। অর্থাৎ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়—এটাই হলো মানুষের কবর জগত বা আলমে বরজখ। ‘চাই মৃতদেহ কবরে দেওয়া হোক বা না হোক, কিংবা শূলীতে চড়ানো হোক, অথবা সমুদ্রে ডুবে যাক কিংবা ছিন্নভিন্ন বা ভস্ম হয়ে উড়ে যাক, সকলের স্থানই বরজখে হবে’। (শারহুস সুদুর: পৃষ্ঠা-১৬৪) ইমাম ফাররা বলেন, মরণের দিন হতে পুনরুত্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত হলো বরজখ (বা কবর জীবন)। (লিসানুল আরব: খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৯০৮)
এই কবর প্রতিদিন মানুষকে সম্বোধন করে কিছু কথা বলে। কিন্তু মানুষ তা শুনতে পায় না। হাদিস থেকে জানা যায়, কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলতে থাকে- أَنَا بَيْتُ الْغُرْبَةِ وَأَنَا بَيْتُ الْوَحْدَةِ وَأَنَا بَيْتُ التُّرَابِ وَأَنَا بَيْتُ الدُّودِ ‘আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা।
আরও পড়ুন: কবর বা আলমে বরজখ কেমন জগত?
হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো একসময় রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে (জানাজায়) এসে দেখেন যে, কিছু লোক হাসাহাসি করছে। তিনি বললেন, ওহে! তোমরা যদি জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি মনে করতে তাহলে আমি তোমাদের যে অবস্থায় দেখছি অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে। তোমরা জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ করো। কেননা কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলতে থাকে, আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা।
তারপর কোনো ঈমানদারকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, ‘মারহাবা, স্বাগতম’, আমার পিঠের উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে প্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে, আর তুমি আমার কাছেই এসেছ। সুতরাং তুমি শীঘ্রই দেখবে যে, আমি তোমার সাথে কেমন সৌজন্যমূলক ব্যবহার করি। তারপর কবর তার জন্য দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের দিকে তার একটি দরজা খুলে দেয়া হবে।
আর অপরাধী পাপী কিংবা কাফিরকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, তোমার আগমন অশুভ ও তোমার জন্য স্বাগতম নেই। কেননা আমার উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে ঘৃণিত ও অপ্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট ফিরে এসেছ। সুতরাং শীঘ্রই দেখবে, আমি তোমার সাথে কেমন জঘন্য আচরণ করি। এই বলে সে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং তার উপর একেবারে চেপে যাবে, ফলে তার পাঁজরের হাড়সমূহ পরষ্পরের মধ্যে ঢুকে যাবে। রাবী বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ (স.) এক হাতের আংগুলসমূহ অপর হাতের আংগুলে ঢুকিয়ে বললেন, ‘এভাবে’। তিনি আরও বললেন, তার জন্য এরূপ সত্তরটি অজগর সাপ নিয়োগ করা হবে, তার মধ্যে একটি সাপও যদি যমিনে একবার ফুঁ দেয় তাহলে এতে কোনোকিছুই উৎপন্ন হবে না।
তারপর হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত সে অজগরগুলো তাকে দংশন করতে থাকবে, খামচাতে থাকবে। রাবি (আবু সাঈদ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কবর হলো জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। (জামে তিরমিজি: ২৪৬০) সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম